Movie Review: Alinagarer Golokdhadha by Sayantan Ghosal
আলিনগরের গোলকধাঁধা – বাংলা সিনেমার এক পথিকৃৎ
বাংলা সিনেমায় থ্রিলার বা রহস্য রোমাঞ্চের বড্ড অভাব। ফেলুদা-ব্যোমকেশ কিংবা হালের কিরীটি আর শবর গোয়েন্দা সিনেমা ঠিকই কিন্তু এডভেঞ্চার মুভি বাংলায় কমই হয়েছে। গত বছর এই ধারাক্রমটা ভাঙেন সায়ন্তন ঘোষাল, ‘যকের ধন’ ছবিটির মাধ্যমে। স্বভাবতই প্রত্যাশার পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী, আর পরিচালক মশাই দর্শকের চাহিদার মান রেখেছেন এই ছবিটিতে।
‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’ এমন এক সময় তৈরী হল যখন বাংলা সিনেমা তো দূরের কথা, বাংলা সংস্কৃতি, মায় ভাষাটা পর্যন্ত অস্তমিত হওয়ার পথে। আজকের এই ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ যুগে দাঁড়িয়ে পরিচালক মহাশয় একটি কালজয়ী, পথিকৃৎ ছবি উপহার দিলেন আমাদের। বাংলা সাহিত্য, সাহিত্যের ইতিহাস এবং বঙ্গের ইতিহাস এই সিনেমার মজ্জায় মজ্জায়। নিজের শহর, নিজের ভাষা তদোপরি নিজের মাতৃভূমি সম্বন্ধে কত কিছুই না জানলাম এই আড়াই ঘন্টায়। ধন্যি, ঘোষাল বাবু।
একটি প্রাসাদ যেমন দাঁড়িয়ে থাকে ইঁটের ভীতে, তেমনই এই ছবির মূল হোতা অবশ্যই অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য। তুখোড় অভিনয়, শ্যেন দৃষ্টি, সাবলীল স্ক্রিন প্রেজেন্সের মাধ্যমে সোহম কে সে জীবন্ত করে তুলেছে। বাংলার ইতিহাসের অগাধ পান্ডিত্য কে হাতিয়ার করে একের পর এক ধাঁধা নিমেষে সমাধান করছে সে। সঙ্গী পার্নো মিত্র সঙ্গত দিয়েছেন পুরো দমে।
বাকি অভিনেতাদের মধ্যে গৌতম হালদারকে মগনলাল মেঘরাজকে অনুকরণ করতে গিয়ে একটু বেশি রগচটা করে ফেলেছেন। এরকম গল্পে ভিলেন যদি নিজেকে কমেডিয়ানে পর্যবসিত করেন, তাহলে তো মুশকিল। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিপাট অভিনয় করেছেন। এই সিনেমায় অনেকদিন পর মনোজ মিত্র এবং মনু মুখোপাধ্যায়কে বড়পর্দায় দেখলাম। যদিও খুব ছোট রোলে। যত টুকু সময় এঁরা পর্দায় ছিলেন, তাদের এতবছরের অর্জিত অভিজ্ঞতা ও অভিনয় দক্ষতা উজাড় করে দিয়েছেন।
একদিকে যেমন চিত্রনাট্য ছবির হিরো, তেমনি চিত্রগ্রাহক মহাশয়ও প্রশংসার পাত্র বটে। ড্রোনের ব্যবহারে চেনা কলকাতার এক অচেনা রূপ দেখলাম। সাথে উত্তর কলকাতার গলিঘুপচি তো আছেই। শেষের ক্লাইম্যাক্সে মুর্শিদাবাদের দৃশ্যগুলি দেখার থেকেই মন আনচান করছে এখুনি নবাবদের রাজধানী ঢুঁ মেরে আসতে।
আমি কমার্সিয়াল/আর্ট সিনেমা – এই ভাগাভাগিতে বিশ্বাসী নই। আমার কাছে সিনেমা শুধু দু প্রকার – ভাল আর খারাপ। এই সেদিনই আনন্দবাজারে একটা লেখায় পড়লাম ভাল সিনেমা মানে যার রেশ কাটতে চায় না। আলিনগরের গোলকধাঁধা এই পর্যায়েই পড়ে। ঘোষাল বাবুর পরবর্তী ছবির অপেক্ষায় রইলাম।
My Rating: 3.5/5 stars
DISCLAIMER: All Images Used In This Post Have Their Respective Copyrights
Posted on April 21, 2018, in film and tagged adventure, Alinagarer Golokdhadha, Bengali, Bengali cinema, cinema, fiction, film, Film Recommendation, Film Review, Films, Movie, Movie Recommendation, movie review, movies, Sayantan Ghosal, thriller. Bookmark the permalink. Leave a comment.