অব্যক্ত – সম্পর্কের জটিলতার অনবদ্য নিবেদন
হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়,
সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়।।
‘অব্যক্ত’ ছবিটির একদম শেষের দিকে একটি দৃশ্যে এই লাইনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। ভালোবাসা কারে কয়, কবিও অনুধাবন করতে পারেননি। আমরা কোন ছাড়। জীবন আমাদের যে পরিস্থিতির সম্মুখীন দাঁড় করিয়ে দেয়, সেখান থেকে হয় আমরা বেড়ি ভেঙে এগিয়ে যেতে পারি, নয়তো নিয়তির সাথে আপস করে মানিয়ে নিতে শিখতে পারি। সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, এতে কি ভালোবাসার ওপর কোপ পড়ে? হয়তো ভাগ্যনিয়ন্তাই জানেন।
অর্জুন দত্তের ছবি ‘অব্যক্ত’ সম্পর্কের ছবি। ভালোবাসার ছবি। মননের ছবি। মানিয়ে নেওয়ার ছবি। ভালোবাসা কি শুধুই অভ্যাস? একজন মানুষকে আশ্রয়স্থল করে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার পর, সে আপনাকে আপন করে নেবে তো? অন্তর্নিহিত রূঢ় বাস্তব জেনেও অজানার ভান করতে করতে ক্লান্ত আপনি যদি একদিন হারিয়ে ফেলেন সংযম – খুলে যায় আপোসের মুখোশ? নিমেষে ভেঙে যাবে কাঁচের প্রাসাদ? এমন সব ভাবনার উদ্রেক করে ‘অব্যক্ত’।
ছবির চিত্রনাট্য অনবদ্য। দৃশ্যকল্পনা থেকে সংলাপ – অসম্ভব পরিণত। যেভাবে শুরু থেকে শেষ অবধি না বলা সম্পর্কের কথা দৃশ্যায়িত করেছেন পরিচালক তাতে মুন্সিয়ানার ছাপ পাওয়া যায়। প্রতিটি ফ্রেমই যেন একটি পূর্ণ দ্বৈর্ঘ্যের ছবি। অর্পিতা ও অনুভবের রসায়ন শক্ত করে ছবির ভিত। সংলাপ না বলেও তারা যেভাবে একে ওপরের সাথে কমিউনিকেট করেছেন, তা প্রশংসনীয়। আদিল হুসেন ছাপ রেখে যান নিজের স্বল্প পরিসরে। ওনার গলায় শেক্সপীয়ারের সংলাপ আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।
ছবির দৃশ্যগ্রহণ ‘অব্যক্ত’ কে অন্য মাত্রা দেয়। শুরুতে দোলের দৃশ্যই হোক বা মধ্যান্তরের আগে মৃত্যুর দৃশ্য, বিশেষত বৃষ্টির ফ্রেমগুলো মন ছুঁয়ে যায়। ছবিটি আরও পূর্ণতা পায় সঙ্গীতে। আবহে সরোদ শুনতে শুনতে হয়তো আপনি হারিয়ে যাবেন ছবির মধ্যেই। সিনেমা শেষ হয় সত্ত্বেও ঘোর কাটবে না। এছাড়া, রবীন্দ্রনাথের ‘কাঁদালে তুমি মোরে’ গানটির ব্যবহারও আপ্লুত করবে আপনাকে। গানের ছন্দপতন মন বিষিয়ে যাবে আপনারও।
যে সন্তান-সর্বস্ব মা নিজের সবকিছু ত্যাগ করে তার ছেলেকে মানুষ করতে, সে-ই বড় হয়ে মায়ের প্রতি অভিমানী। একরাশ না-বলা কথার পাহাড় দূরত্ব তৈরি করেছে তাদের মাঝে। অতিক্রম করতে মুখোমুখি হতে হবে অতীতের, সত্যের, বাস্তবের। সহজ অঙ্ক, কিন্তু সমাধান বড় জটিল। সম্পর্কের এই গল্পে ঠাসবুনোট অভিনয় ও সঙ্গীত। বাহবা অবশ্যই প্রাপ্য অর্জুন দত্তের। দক্ষ পরিচালনা, গল্প বলার ধরণ তার খুবই পরিণত। সম্পর্কের জটিল সমীকরণ যে সারল্যে তিনি পর্দায় পরিস্ফুট করেছেন তা শিক্ষণীয়।
পরিশেষে, হল থেকে বেরোনোর সময় একরাশ দীর্ঘশ্বাস, কিছুটা মন খারাপের ছোঁয়া, গলায় দলা পাকানো কান্নার সাথে রবি ঠাকুর এবং মন ভালো করা সরোদের বোল আপনার সঙ্গী হবে।
Posted on February 3, 2020, in film and tagged Abyakto, Anubhav Kanjilal, Arjunn Dutta, Arpita Chatterjee, film, Film Recommendation, Film Review, Films, Movie Recommendation, movie review, movies, Music, Relationships, review. Bookmark the permalink. Leave a comment.
Leave a comment
Comments 0