পাঠ প্রতিক্রিয়া – মগ্নপাষাণ (সূর্যনাথ ভট্টাচার্য)

ভারতের ইতিহাসে সম্রাট অশোকের নাম চিরকালীন। মৌর্য বংশের কুলপ্রদীপ এই মগধনরেশের বীরগাঁথা আজও জনমানসে যথেষ্ট কৌতূহল উদ্রেক করে। কলিঙ্গ যুদ্ধ এবং চণ্ডাশোকের ধর্মাশোকে উত্তরণের কাহিনী সকলেরই জানা। বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক হিসেবেও অশোকের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে। তাঁর শাসনকালে তৈরি স্তুপগুলি তো জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। আর অশোক চক্র দেশের জাতীয় পতাকায় সমুজ্জ্বল।
কিন্তু এই অশোকের জীবনে রয়েছে এক অজানা অধ্যায়। সম্রাট বিন্দুসারের প্রয়াণের পর নিজের সহোদরদের হত্যা করে কীভাবে সিংহাসন লাভ করেছিলেন তিনি, তা নিয়ে ধোয়াঁশা আজও। সম্রাট পদে আসীন হওয়ার আগে তাঁর জীবনের বেশ কিছু বছরের হিসেব নেই ইতিহাসের পাতায়। লেখক সূর্যনাথ ভট্টাচার্যের এই আখ্যানে উঠে এসেছে সেই গল্পই।
সম্রাট বিন্দুসারের এক নিচ কুলের রানীর সন্তান ‘প্রিয়দর্শন’। রাজমহলে তাচ্ছিল্যের পাত্র সে। অগ্রমহিষীর সন্তান সুসীমের সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব। তাঁর বন্য স্বভাবের জন্য প্রজারা ভয় পেতেন তাঁকে। সম্রাটের মৃত্যুর পর এক ভয়াল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় পাটালিপুত্র। মগধের পরবর্তী নরেশ কে হবেন তা নিয়ে শুরু হল দুই ভাইয়ে ভয়ঙ্কর লড়াই, যা চলল দীর্ঘ চার বছর। এই দ্বন্দে নানা সময় নানা পাত্রের আগমন। জড়িয়ে গেল তিন্দারী গ্রামের হতভাগ্য, নিষ্পাপ নিবাসীদের ভবিষ্যৎও।
সূর্যনাথ ভট্টাচার্যের অসামান্য লেখনীর মাধ্যমে অশোকের জীবনকাহিনী এক অন্য মাত্রা পায়। তাঁর ভাষার দক্ষতা, লেখায় অপ্রচলিত শব্দকোষের মন্ত্রমুগ্ধকর ব্যবহার বাংলা ভাষাপ্রেমী হিসেবে সমৃদ্ধ করে পাঠককে। গল্পের ঠাসবুনোট ও নাটকীয়তার সংমিশ্রণ বিবশ করে একনাগাড়ে বইটি পড়ে যেতে। আর শেষ পাতার পর রবীন্দ্রনাথের অমোঘ সেই লাইনের কথা মনে পড়ে, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ – ইচ্ছে হয় যেন শীঘ্রই এই আখ্যানের সিক্যুয়াল প্রকাশ হয়।
ইতিহাসধর্মী লেখা আজকাল প্রকাশিত হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু অধিকাংশ কাজই পাতে দেওয়ার মত নয়। মধ্যমতার এই ভিড়ে ‘মগ্নপাষাণ’ অবশ্যই তফাতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
Posted on February 9, 2021, in Books and tagged Ashoka, মগ্নপাষাণ, সুপ্রকাশ, সূর্যনাথ ভট্টাচার্য, Bengal, Bengali, Book Review, Books, fiction, historical fiction, history, Magadha, Mourya Dynasty, Suprokash. Bookmark the permalink. Leave a comment.
Leave a comment
Comments 0